সিরিয়ানা
যুদ্ধবিদ্ধস্ত সিরিয়ার জন্য লেখা এই কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "আফ্রিকা"-র দ্বারা অনুপ্রাণিত, এমনকি আফ্রিকার adaptation ও বলা চলে।
মধ্যরাতের অন্ধকার আমায় দিয়েছিলো শান্তির প্রতিশ্রুতি ।
আমার অত্যন্ত আপন শয্যা, জানাচ্ছিল আলিঙ্গনের আমন্ত্রণ ।
তখনই, ঠিক তখনই, বিদেশিনী তুমি, চিৎকার করে উঠলে; "আল্লাহু আকবর !"
কিন্তু তোমার ঈশ্বরও তখন ভীরুতার অন্ধকারে বেপাত্তা !
সভ্যতার বর্বর উল্লাসে বিলীন হয়ে গেলে তুমি !
ছন্দ গেলো হারিয়ে, বর্ণহীন প্রস্তরের ধূসরতায় ।
বন্দুকের গর্জন আর তোমার আর্তনাদের প্রতিধ্বনি,
মানবিকতার সর্বশেষ চিহ্নটুকুও ফুৎকারে উড়িয়ে দিলো !
তাজা বুলেট এর অহংকারে অন্ধ ওই পশুগুলো, ছিনিয়ে নিলো তোমায়,
প্রতিহিংসার রুদ্ধশ্বাস নৃশংসতায় ।
কালাশনিকভ-এর ধাতব স্পর্শে চুরমার হলো স্বপ্ন,
ক্ষতবিক্ষত হলো তোমার বক্ষ !
পুড়তে থাকা প্রাসাদের নিকষকালো ছাই,
কলংকিত করলো তোমার শ্বেত-শুভ্র ললাট !
বোরখার অন্ধকারের পেছনে, অভিমানিনী তুমি,
প্রার্থনা করছিলে তোমার ঈশ্বরের কাছে
তখনই, ঠিক তখনই, বিদেশিনী তুমি, চিৎকার করে উঠলে; "আল্লাহু আকবর !"
আঠারো বছর বয়সের ওই কিশোর,
ভয়ঙ্কর উল্লাসে আর অমানুষতার অট্টহাসিতে
তোমার ধড় থেকে মস্তক করলো ছিন্ন,
নিংড়ে ফেলে দিলো তোমার প্রাণের অন্তিম বিন্দুটুকুও !
তার প্রত্যেকটি মাংসপেশি তখন হত্যার ক্ষুধায় নৃশংস !
তার পর, অন্ধবিশ্বাসের প্রলয়রথে চড়ে
সে পাড়ি দিলো অন্য কোনো মৃত্যুপুরীর উদ্দেশে !
তোমার রক্ত, পৃথিবীর বুকে এঁকে দিলো কলংকের বীভৎস চিত্র !
আল্লাহু আকবর ! হে সর্বময় বিধাতা,
আজ রক্তপিপাষুর দল হিংসার নিষ্ঠুর ক্রীড়ায় মগ্ন,
তোমার উন্মাদ ভক্তেরা গর্জন করে গাইছে হত্যার প্রশস্তি,
তুমি নতজানু হও ওই মেয়েটির প্রাণহীন দেহের পাশে,
ওর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করো।
তারপর, হিংসার প্রচন্ড ধ্বংসলীলার মাঝে,
গলা ফাটিয়ে পদত্যাগ করো।
তোমার সর্বময়তা আজ ওই মেয়েটির সাথেই মৃত্যুবরণ করেছে !